গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের সমালোচনা করে প্রকাশিত একটি খোলাচিঠিতে সই করায় দেশটির বিমানবাহিনীর রিজার্ভ সদস্যদের মধ্যে কর্তব্যরত সেনাদের বরখাস্তের ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ)। শুক্রবার (১১ এপ্রিল) স্থানীয় সময় এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) এক কর্মকর্তা। খবর এপির।
এপিতে পাঠানো এক বিবৃতিতে আইডিএফের এক কর্মকর্তা জানান, যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়া অবস্থায় সেনারা খোলাচিঠিতে সই করে শৃঙ্খলা ও সামরিক নীতিমালার লঙ্ঘন করেছেন। এ ধরনের কর্মকাণ্ড সেনাবাহিনীর মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করে এবং কর্তৃপক্ষ ও সদস্যদের মধ্যে আস্থার ঘাটতি তৈরি করে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
সেনাবাহিনী জানিয়েছে, বর্তমানে যুদ্ধে কর্তব্যরত রয়েছেন এমন যেসব সদস্য ওই খোলাচিঠিতে সই করেছেন, তাদের বরখাস্ত করা হবে। তবে ঠিক কতজন সদস্যকে বরখাস্ত করা হবে সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে গাজায় হামলা শুরু করায় ইসরায়েলি প্রশাসনের সমালোচনা করে দেশটির গণমাধ্যমে একটি খোলাচিঠি প্রকাশিত হয়। এতে বিমানবাহিনীর প্রায় ১ হাজার রিজার্ভ ও অবসরপ্রাপ্ত সদস্য সই করেন।
তারা অভিযোগ করেন, গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে সরকার রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির চেষ্টা করছে এবং হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের মুক্ত করতে প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে। প্রয়োজনে যুদ্ধ থামিয়েও জিম্মিদের ফেরানো উচিত বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
এমন এক সময়ে এই খোলাচিঠি প্রকাশিত হয়েছে, যখন হামাসের হাতে থাকা বাকি জিম্মিদের ফেরানোর অজুহাতে পুনরায় নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় খাদ্য, জ্বালানিসহ জরুরি মানবিক সেবার প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে ইসরায়েলি প্রশাসন।
হামাসের হাতে থাকা ৫৯ জিম্মির মধ্যে প্রায় অর্ধেকই মৃত বলে জানা গেছে। হামাস জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলাতেই তারা প্রাণ হারিয়েছেন। গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে গাজায় পুনরায় ইসরায়েল হামলা শুরু করলে বাকি জীবিত জিম্মিদের প্রাণও ঝুঁকিতে পড়ার কথা জানায় হামাস।
তবে এতে ভ্রূক্ষেপ না করেই ভয়াবহ হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। প্রতিদিনই প্রাণ হারাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। খোলাচিঠিতে সই করা সেনারা নিজেদের দায়িত্ব পালনে অপারগতার কথা না জানালেও গাজায় যা হচ্ছে তা নৈতিকতা বিরুদ্ধ বলে মন্তব্য করেন।
এই চিঠির নেতৃত্বে থাকা বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত পাইলট গাই পোরান বলেন, ইসরায়েলি প্রশাসনের গাজায় এই হামলা শুরু করার সিদ্ধান্ত পুরোপুরি অযৌক্তিক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন। এতে তারা জিম্মি ও ইসরায়েলের বহুসেনাসহ নিরপরাধ ফিলিস্তিনিদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলেছে। অথচ এই হামলার সুস্পষ্ট বিকল্প কিন্তু প্রশাসনের হাতে ছিল।
তবে চিঠিতে সই করা সেনাদের মধ্যে কাউকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে তার জানা নেই উল্লেখ করে গাই বলেন, কেউ বরখাস্ত হয়েছে বলে শুনিনি আমি, তবে চিঠি প্রকাশের পর আরও অনেক সেনা এতে সই করছেন।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু এই চিঠির ঘটনাকে গুরুত্ব না দিয়ে বলেন, ‘বিদেশি এনজিওর অর্থায়নে কিছু ‘আগাছা’ এই কাজ করেছে। এর উদ্দেশ্য ডানপন্থি সরকারের পতন ঘটানো।’
সাধারণত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ইসরায়েলের সেনাদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ, তাই প্রশাসনের যেকোনো সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে খুব কমই তাদের প্রতিবাদ করতে শোনা যায়। তবে বর্তমানে সেই চিত্র বদলাচ্ছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলার পর গাজায় যুদ্ধ চালানোর বিষয়ে সবাই একমত হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভিন্নমত বাড়ছে। ইসরায়েলের অভ্যন্তরে গাজায় অব্যাহত হামলার সমালোচনা বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে যুদ্ধে সেনাদের নিহতের সংখ্যা বাড়ার কারণে ও জিম্মিদের মুক্তিতে ব্যর্থতায় নেতানিয়াহু প্রশাসন সমালোচনার মুখে পড়েছে।